ধান্য মরিচ ঝাল বেশি


মোঃ মাসুম হোসেন:
কথায় বলে ধান্য মরিচ ঝাল বেশি। সাইজে ছোট হলেও ঝাল কিন্তু বড় মরিচের চেয়ে বেশি। ঝাল বেশি হওয়াতে এই মরিচ সাধারণত রান্নার কাজে তেমন ব্যবহার করা হয়না, কারণ এ মরিচের তেজ সবাই সহ্য করতে পারে না।

এবার মূল কথায় আসা যাক, আমরা কাউকে মোটিভেট করতে গিয়ে সচরাচর যেটা বলে থাকি, Size doesn’t matter. অর্থাৎ সাইজ যেমনই হোক যোগ্যতাই আসল। যোগ্যতা থাকলে সাইজ কোন বাধা নয়। একজন মানুষের যখন শিক্ষা, যোগ্যতা, শক্তি সামর্থ্য থাকে তখন তার সাইজ নিয়ে প্রশ্ন হয় না, সাইজ তখন কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। আসলেই কি বাস্তব জীবনে এটি ঘটে নাকি বাক্যটি কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? না মোটেও না।

এই একবিংশ শতাব্দীতে প্রাত্যহিক অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে, মানুষের আচার আচরণ ধ্যান ধারণা সহ বিভিন্ন অফিসের নিয়ম কানুনও। প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে কমবেশি সবারই শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার বিবেচনায় সাইজ বিষয়টিও কম গুরুত্বের নয়। আমরা প্রায়ই দেখি বিভিন্ন অফিসে যখন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয় তখন কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তার শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতিও প্রাধান্য দেয়া হয়। তখন সাইজ কোন ব্যাপার না বলে বুলি ছড়াক না কেন পরিশেষে দেখা যায় চাকরি তারাই পায় যারা শারিরীক ভাবে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। এক্ষেত্রে সাইজের ফিট হলে কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা কেও শিথীল করা হয়। ব্যাপারটি আমার ক্ষেত্রে অনেকবারই ঘটেছে। এনজিও সেক্টরে আমি নিজে কয়েকবার এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। একটি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থাতে (নাম গোপন থাকুক) ইন্টারভিউ দিতে গেছিলাম ২০১৯ সালে। ইন্টারভিউতে এক বিদেশী আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিল; প্রশ্নের শেষ পর্যায়ে আমাকে বলছিল, You are too small! It’s field level task, I mean you are not fit for for job!
স্বাস্থ্যগতভাবে আমি আসলেই ছোট ছিলাম। বাকি যারা আমার প্রতিযোগী ছিলো তারা সবাই আমার দিক দিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতায় কম হলেও শারীরিকভাবে অনেকটা ফিট ছিল। বিদেশীর কথার বাংলা অনুবাদক এক দেশি বস বলতেছে; আপনি তো ছোট সাইজের, মানছি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ফিট আছে কিন্তু আপনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পারবেন তো? ক্যাম্প লেভেল কাজে শারিরীকভাবেও ফিট থাকতে হয়। আমি তখন বুঝেই গেছিলাম চাকরি টা আমার আর হবে না। বিষন্ন মনে সেদিনের মতো বিদায় নিয়েছিলাম নিজের সাইজের প্রতি একরাশ হতাশা নিয়ে। এরপরে আরো দুবার একই পরিস্থির সম্মুখীন হয়েছি। এরকম আমার মতো সাইজের যারা আছেন একমাত্রই তারাই এই পরিস্থিতির মর্ম বুঝতে পারবেন!

বিয়ে করার সময় যখন মেয়ে দেখতেছিলো, তখনও সাইজ নিয়ে মহা শঙ্কায়! জামাই তো দেখি মেয়ের চেয়ে ছোট হবে, মিলবে তো! জামাইবাবু তো অনেকটা ছোট ছেলের মতো। বিশেষ করে মেয়ের আত্মীস্বজনদের তো কথাই নেই, সোজা সাপ্টা বলতো, জামাই তো গুরা পুয়া (ছোট ছেলে) যেন হাইস্কুল ছাত্র! এভাবেই মন্তব্য করতো যেন তাদের মেয়েকে সবসময় আমার মাথায় কিংবা কাঁধে তুলে রাখতে হবে। তারা তখন দেখেনি আমার চাকরি বাকরি, আমার শিক্ষা আমার যোগ্যতা কিংবা আমার সামর্থ্য।

আসলে আমরা সাইজ নিয়ে যতই বুলি ছড়াই না কেন, বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বেশিরভাগ সেক্টরে সাইজকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়।

ছোট সাইজের হওয়াটা অনেক কষ্টের, অনেক বাঁধার! এক্কেবারে প্রতিবন্ধী কিংবা কোন অঙ্গহানি হলে প্রতিবন্ধী কোটায় আবেদন করা যায়, সরকারি ভাতা পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন দান অনুদানও পাওয়া যায়। এই গঠনটা এমন যে, না থাকে কোটা, না পাওয়া যায় ভাতা, উল্টো যাঁতার কলে বাড়ে ব্যাথা! কাউকে বুঝানো যায় না, কেউ বুঝেও না ব্যাথা।

আসল কথা হলো সাইজ খুবই গুরুত্ব বহন করে। যতই সাইজ ডাজন’ট ম্যাটার বলে বুলি ছড়াই না কেন বাস্তবিকভাবে এর প্রয়োগ শূন্য। আমার মতো সাইজের ছেলেদের জীবন থাকে সংগ্রামে, কঠিন পথে তাদের পদে-পদে বিভিন্ন বাঁধাকে অতিক্রম করতে হয়। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে স্মরণ করে এগিয়ে যায় সামনের পানে। ধান্য মরিচের মতো তেজ, নিজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং আল্লার ওপরে অবিচল বিশ্বাস ও ভরসা করে অগ্রগামী হয় তারা। মহান আল্লাহ সুস্থ সবল এবং পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এটাই আমাদের প্রাপ্তি, এটাই আমাদের অনুপ্রেরণা।

লেখক:
মোঃ মাসুম হোসেন